পঞ্চাশের দশকে রেডিও থেকে বেতার জগত প্রকাশিত হত। ১৯৫৬ সালে জুন মাসে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা একটি গান। সেই সময় রেডিওতে রাত পৌনে এগারোটায় আধুনিক বাংলা গান হতো। ওই গানটি শ্যামল মিত্র রেডিওতে দু-তিনবার গেয়েও ছিলেন শ্রোতাদের অনুরোধে কিন্ত গানটি তখনো রেকর্ড আকারে বের হয়নি
পরবর্তীকালে সত্তরের দশক। বম্বেতে শক্তি সামন্তের ডাবল ভার্সন সিনেমা অমানুষ বানাবেন, মহানায়ক উত্তম কুমারকে হিরো করে। নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর এবং মিউজিক ডিরেক্টর শ্যামল মিত্র। একদিন গান নিয়ে আলোচনায় বসলেন পরিচালক শক্তি সামন্ত, গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং সুরকার শ্যামল মিত্র। শক্তি বাবুকে শ্যামল মিত্র ৬-৭ খানা সুর শুনিয়েছেন কিন্তু তাঁর সে সুর পছন্দ হচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরেই আলোচনা হচ্ছে।
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার কাছেই একটা কাজ সারতে বেরিয়ে পড়লেন। শ্যামল মিত্র খানিকটা বিরতি নিয়ে গেলেন ওয়াশরুমে আর সেই আলোচনাতে উপস্থিত ছিলেন শ্যামল বাবুর ভাই সলিল মিত্র। এই সুযোগে তিনি শক্তি সামন্তকে বললেন - আমি একটা গৌরি'দার লেখা এবং দাদার সুরে গান শোনাবো? শক্তি সামন্ত রাজি হলে এবং সলীল বাবু শোনালেন সেই পঞ্চাশের দশকে গাওয়া রেডিওর সেই গানটি। গানটি শুনে দারুণ পছন্দ হলো শক্তি বাবুর। ততক্ষণে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সব শুনে শ্যামল বাবু একটু বিরক্তই হলেন ভাইয়ের প্রতি! কারন তাকে না জানিয়ে এমন কাজটা করেছেন; যাইহোক - তড়িঘড়ি করে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে ডাকা হলো এবং গানটি তিনি আবার লিখে দিলেন তাতে দু-একটা শব্দ বদলে দেয়া হলো
আলোচনায় ঠিক করা হলো এই গানটি গাইবেন কিশোর কুমার। গানের সুর বেশ পছন্দ হলো কিশোর কুমারের। রেকর্ডিং এর তারিখ ও ঠিক করা হলো হঠাৎ একদিন সকালে কিশোর কুমার হাজির শ্যামল মিত্রের কাছে। বেশ গম্ভীর গলায় বললেন - আপনি আমায় ঠিয়েছেন! কি ব্যাপার? কেউ একজন কিশোর বাবুকে জানিয়েছেন - যে গানটি কিশোর কুমার গাইতে চলেছেন সেটি শ্যামল মিত্রের গাওয়া পুরনো রেডিও তে প্রকাশ হওয়া হিট গান। সত্যি বলতে গেলে গানটির কোন রেকর্ড ই হয়নি। সিনেমার প্রয়োজনে গানটি নতুন করে গাওয়া যেতেই পারে
কিশোর কুমারের হাত ডুটি ধরে শ্যামল মিত্র বললেন - জানেন, আমি যখন এই পৃথিবীতে থাকবো না তখন লোকে বলবে শ্যামল মিত্রের সুরে কিশোর কুমার একটা গান গেয়েছিলো। এ গান আপনি ছাড়া ভারতবর্ষে কেউ গাইতে পারবে না আপনাকেই গাইতে হবে। শ্যামল বাবুর চোখে তখন জল। কিশোর কুমার বললেন - এত বড় কথা বলছেন! তখন শ্যামল বাবু বলেছিলেন - আমি বড় কথা বলি না। সত্যি কথা বলি
সেই গান গাইলেন কিশোর বাবু। ফলাফল সেই গান এতটাই হিট হলেছিলো যে, সে বছর সেই গানের জন্যই বেষ্ট প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে পুরুস্কার পেয়েছিলেন কিশোর কুমার। যে গান নিয়ে এত কান্ড সেই গানের নাম কি ছিলো জানেন? সে গানের নাম ছিলো - কি আশায় বাঁধি খেলা ঘর, বেদনার বালুচরে
🔊 শেষ কথা - ছোটো বেলা থেকে রেডিওতে বাংলা পুরোনো দিনের গান শুনে বড় হয়েছি। তাই ঔ সময়কার শিল্পীদের আমি এক একটি নক্ষত্র মনে করি। শ্যামল মিত্রর মতো মানুষেরা মনীষীর পর্যায়ে পড়েন। উনি বাংলা সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। এই পোষ্ট পড়ে যদি আপনার মনে হয় এখানে দেয়া কোন তথ্য ভুল আছে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমি আমার ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করবো। লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ❤️