উপহারে পাওয়া সেতার দিয়ে সলিল চৌধুরী তৈরী করলেন কালজয়ী গান!

আমেরিকার লস এঞ্জেলেসে অবস্থিত একটা মিউজিক স্টোরে খুব কমন একটা পোশাক পড়া এক ভদ্রলোক ঢুকলেন উদ্দেশ্য সেতার কেনা। তাকে দেখে সেই ষ্টোরে থাকা মানুষ জন খুব একটা ইমপ্রেস'ড হয়নি প্রথম দেখাতে। ফতল সেই ভদ্রলোক কে খুব বেশি পাত্তা ও দিচ্ছেলেন না ষ্টোরে থাকা কর্মচারীরা। মিউজিক ষ্টোরে একজন কাস্টমার এসেছেন নেহাত এটেন্ড করতে হবে এটা ভেবে সেই ষ্টোরে থাকা যে সেল'স গার্লটি অর্থাৎ মেয়েটি ছিলেন তিনি তাকে এটেন্ড করতে গেলেন 

বিভিন্ন ধরনের মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট দেখতে দেখতে হঠাৎ সেই ভদ্রলোকটির চোখ গেলো একটা বড় আলমারির একদম উপরে রাখা একটা বিরাট বড় সেতারের ওপর। সেই ভদ্রলোক তখন বায়না ধরলেন যে, ওই সেতারটা তাকে নামিয়ে একবার দেখাতে হবে। এবার ওই বিরাট সেতারটা নামানো সেই সেল'স গার্লের পক্ষে অত্যন্ত ক্রিটিকাল ব্যাপার তাই সেই মেয়েটি বার-বার সেতারের বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইছেন এবং বলছিলেন যে, দেখুন স্যার ওটা নামানো সম্ভব নয় তাছাড়া ওটা সবাই বাজাতেও পারে না এবং ওটা বাজানো খুব কঠিন কিন্তু সেই মানুষটিও যেন নাছোর বান্দা।  তিনি ওটা নামাবেন ই এবং দেখবেন ই; 

শেষে ভদ্রলোকের এক প্রকার জোড়া-জুড়িতে সেই দোকানের মালিক চলে এলেন এবং তাঁর কথায় সেই বিরাট বড় সেতার টা নামানো হলো। লস এঞ্জেলেসে অবস্থিত সেই মিউজক স্টোরে বসে সেই সাধারন ভদ্রলোকটি ওই সেতার টা হাতে নিলেন এবং বাঁজানো শুরু করলেন। একটানা আধাঘন্টা মন্ত্রমুগ্ধের মত গোটা দোকানের যত কর্মচারী ছিলো, ক্রেতা ছিলো, এছাড়া দোকানের আশে পাশের যত মানুষজন  ছিলো তারাও মন দিয়ে শুনলেন সেই অজ্ঞাত মানুষটি, সেই অজ্ঞাত ভদ্রলকের বাঁজনা।

বাঁজনা শেষ হতে দেখা গেলো যে মেয়েটি সেল'স কাউন্টারে ছিলেন তাঁর চোখে জল। দোকানের মালিক বললেন যে, আমি রবি শঙ্করের বাঁজনা শুনেছি কিন্তু আজকে আমি আপনার কাছ থেকে যেটা শুনলাম সেটা রবি শঙ্করের থেকে কোন অংশে কম নয়। এই সেতার টাকে বস সেতার বলে। এটা সবাই এভাবে বাঁজাতে পারে না কিন্তু আপনি যেটা বাজালেন সেটা ঐশ্বরিক

ভদ্রলোক তখন উত্তর দিলো আপনারা এটাকে বস সেতার বলেন আমরা এটাকে বলি সুর বাহার সেতার। মিউজক স্টোরের মালিক ডেভিড তিনি বললেন যে, "বলুন আমি আপনার কি সেবা করতে পারি? আমি কি করতে পারি আপনার জন্যে?" ভদ্রলোক বললেন যে, "আমি সেতার কিনতে চাই" তখন সেই দোকানের মালিক ডেভিড বললেন যে, আপনার সেতার কেনার দরকার নেই; এই সেতার টা আমি আপনাকে উপহার দিলাম। ভদ্রলোক তখন ওই সেতার নিয়ে দেশে ফিরলেন। একটা গান কম্পোজ করা হলো ওই সেতার টা দিয়ে এবং সেই গানটা হয়ে গেলো চিরকালীন

সেদিনের সেই ভদ্রলোকের নাম সলিল চৌধুরী। গানের পৃথিবীটা বড় শুন্য শুন্য লাগতো যদি সলিল চৌধুরী না থাকতেন। লতা মঙ্গেশকর প্রথম বাংলা গান গাইলেন সলিল চৌধুরীর সুরে আর সে গান চুড়ান্ত ভাবে জনপ্রিয় হয়েছিলো। সেই গানে লতাজির বাংলা উচ্চারণ এতটাই নিখুঁত হয়েছিলো যে, বাঙালী দারুণ ভাবে সেই গান গ্রহন করলো। গানের নাম ছিলো - Na Jeyo Na Rajani Ekhano এবং পরবর্তী কালে বিমল রায়ের সিনেমা Parakh (1960) এ ওই বাংলা গানের একই সুর ব্যাবহার করে লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে গায়িয়েছিলেন সলিল চৌধুরী আর সেই গানের নাম ছিলো - O Sajna Barkha Bahar Aayi

🔊 শেষ কথা - এই পোষ্ট পড়ে যদি আপনার মনে হয় এখানে দেয়া কোন তথ্য ভুল আছে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমি আমার ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করবো। লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ❤️

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম